লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে প্রথমবারের মতো একটি হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে হোটেল বয় হিসেবে কাজ করবে একটি রোবট। ‘চিট্টি’ নামের রোবটটির নির্মাতা কালীগঞ্জ সরকারি করিম উদ্দিন পাবলিক কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী আহসান হাবিব (১৮)। চলতি সপ্তাহেই রোবটটি হোটেলে ডেলিভারি করা হবে বলে জানিয়েছেন হাবিব।
রোবটটি বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষায় যে কোনো প্রশ্নের সাবলীল উত্তর দিতে পারবে এবং চলাচল করতে পারবে মানুষের মতোই। ইউটিউবে ভিডিও দেখে এক মাসের প্রচেষ্টায় হাবিব এ রোবটটি বানাতে সক্ষম হয়েছেন বলে সময় সংবাদকে জানান।
মানুষের দেহের গঠনের সঙ্গে মিল রেখে তৈরি এ রোবটটি সাবলীল ভাষায় কথার উত্তর দেয়া, হালকা ও ভারী কাজ করতে সক্ষম। কোনো ব্যক্তিকে মনে রাখা, মানুষের ছবি ও কথা রেকর্ড রাখতে পারা, হ্যান্ডশেক ও অঙ্গভঙ্গিও করতে সক্ষম রোবটটি। এ রোবটটি বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করতেই সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করবে বলে আশা পোষণ করেন তরুণ নির্মাতা আহসান হাবিব।
কালীগঞ্জ উপজেলার সুন্দ্রাহবি গ্রামের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া আহসান হাবিব নতুন কিছু আবিষ্কারের স্বপ্ন দেখত বাল্যকাল থেকেই। কিন্তু বাবা দরিদ্র কৃষক থাকায় সে তার প্রতিভাকে সঠিকভাবে প্রস্ফুটিত করতে পারছিল না।
কিন্তু ভাগ্য তার প্রতি অতিসুপ্রসন্ন ছিল; বিগত ২০১৭ সালে আহসান হাবিব তুষভাণ্ডার আর এমএমপি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় পড়ার সুবাদে সে স্কুলের ফান্ডের টাকায় বিজ্ঞান মেলা উপলক্ষ্যে একটি রোবট বানানোর সুযোগ পেয়েছিল। সেটি সে লালমনিরহাট জেলা বিজ্ঞান মেলায় প্রদর্শন করে জেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছিলেন। প্রথম স্থান অধিকারের বিষয়টি তার রোবট বানানোর ইচ্ছা শক্তিকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
এর কিছুদিন পরেই ২০১৮ সালের শুরুতেই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী দরিদ্র বাবাকে হারিয়ে তার জীবনে আঁধার ঘনিয়ে আসতে শুরু করে। পিতাকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে আহসান হাবিব। থেমে যায় তার স্বপ্ন। লেখাপড়ার খরচ চালাতে হিমশিম খায় হাবিব।
শুরু হয় জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার কঠিন সংগ্রাম। তবুও দিশেহারা হয়ে পড়েনি এ স্বপ্নবাজ। আহসান হাবিব প্রতিদিন সকাল ৬টা হতে রাত ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ১২টি টিউশনি করে নিজের পরিবার ও লেখাপড়ার খরচ জুগিয়ে চলে সে। টিউশনির সামান্য সঞ্চয় ও ধারদেনা করেই এবার সে একটি হোটেলের জন্য এ রোবটটি তৈরি করছেন।
এ বিষয়ে রোবট নির্মাতা আহসান হাবিব জানান, আমি স্কুলের বিজ্ঞান মেলায় প্রথম আপডেট কিছু করার লক্ষ্যে রোবট বানাই এবং সে মেলায় আমি জেলা চ্যাম্পিয়ন হই। মূলত ইউটিউব দেখেই এ কাজে আমি আগ্রহী হই। সে আরও বলেন, এ কাজে আমি আমার মা, বড়ভাই, চাচাসহ সবার আন্তরিক সহযোগিতা সবসময় পেয়েছি। এ কাজে তারা আমাকে সবসময় সহযোগিতা করেছে বন্ধুর মতোই।
তার মা খালেদা খাতুন বলেন, আমার ছেলের এমন কাজে আমার খুব ভালো লাগছে। আমি খুব আনন্দিত।
তার চাচা সাজু মিয়া বলেন, গ্রামের সবার কাছে হাবিবের মেধার প্রশংসা শুনে আমরা সবাই খুব খুশি। দোয়া করি, সে ভবিষ্যতে যেন আরও ভালো কিছু করতে পারে।
প্রতিবেশী মজনু মিয়া বলেন, দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া হাবিবের এ কাজে গ্রামের সবাই আমরা ধন্য। তার এ কাজে আমাদের গ্রামের সুনাম ও সম্মান বাড়বে বলে মনে করি। সেই সঙ্গে হাবিবের এ কাজে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
নতুন এ রোবটটি কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভাণ্ডার রওশন ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন ভোজন বিলাস হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট-এর জন্য তৈরি করা হয়েছে বলে জানান হাবিব। রোবটটি শিগগিরই ওই হোটেলে ডেলিভারি করা হবে বলে জানান তরুণ রোবট নির্মাতা ও কারিগর আহসান হাবিব।
আহসান হাবিবের তৈরি করা রোবট দেখতে প্রতিদিনই পাড়া, প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধবসহ অসংখ্য উৎসুক মানুষ ভিড় করছেন তার বাড়িতে।